একটি কম্পিউটার বানাতে কি কি লাগে? Computer build

কম্পিউটার কি কি লাগে, কম্পিউটার বানাতে কি কি লাগে, কম্পিউটার চালাতে কি কি লাগে, একটি কম্পিউটার তৈরি করতে কি কি লাগে,

 আমাদের অনেকেরই একটা ড্রিম পিসি বানানোর স্বপ্ন থাকে। আবার প্রায় সবারই বর্তমানে উচ্চশিক্ষায় বা কর্মক্ষেত্রে কম্পিউটার এর প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের বেশিরভাগেরই পিসি বানানো সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা নেই যার ফলে আমরা এখনও কম্পিউটার বা পিসি বানানোর জন্যে পিসি পার্টস বিক্রেতাদের ওপরে নিরভরশীল। তাই আমাদের সবার জেনে নেয়া উচিত একটা পিসি এর মধ্যে কি কি থাকে এবং এদের কাজ কি। তাহলে আমরা সাশ্রয়ীভাবে পিসি বানাতে পারব এবং বিক্রেতারা আমাদের ঠকাতে পারবেনা। এবার চলুন জেনে নেয়া যাক, একটা পিসি বানাতে কি কি লাগে? -All Parts of a Computer.

কম্পিউটার বানাতে যা যা লাগে- পিসি বানানোর চেকলিস্ট

আপনার বাজেট অনুযায়ী আপনি চাইলে ৩০০০০৳ থেকে শুরু করে ১-২ লাখ টাকা দামের ও কম্পিউটার বানাতে পারেন। তবে বাজেট যতই হোক, আপনাকে কিছু পার্টস অবশ্যই কিনতে হবে। নিচে এই পার্টস গুলোর নাম দেয়া হল।

১। কেস – Case
২। মাদারবোর্ড – Motherboard
৩। সিপিউ – CPU [Processor]
৪। জিপিউ – GPU [Graphics Card] (if no integrated GPU)
৫। র‍্যাম – RAM [Memory] (আরও পড়ুন-র‍্যাম ও রমের মধ্যে পার্থক্য কি?)
৬।মেমোরি বা স্টোরেজ ডিভাইস – Storage Device (SSD, NVME SSD, HDD)
৭। কুলিং সিস্টেম – Cooling (CPU, Chassis)
৮।পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট – PSU [Power Supply Unit]
৯।ডিস্প্লে বা মনিটর – Display device, Monitor
১০।অপারেটিং সিস্টেম – Operating System [OS]
১১।ইনপুট ডিভাইসেস – Input Devices, Mouse, Keyboard

এবার এই পার্ট গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-

কম্পিউটার কেস – Computer Case

কম্পিউটারের কেস এটিকে কাঠামো দেয়। এর ভেতরে ওপরের লিস্টের বেশিরভাগ পার্টগুলো সাজানো থাকে আর বাকি পার্টগুলোও প্রত্তক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কেস এর সাথে যুক্ত থাকে। এটি সহজে খোলা বা লাগানো যায়। কেসের ভেতর কম্পিউটারের বিভিন্ন পার্ট স্থাপন করার জন্য যায়গা নির্ধারণ করা থাকে। ভেতরের এই কম্পনেন্ট গুলো ধারন করা ছাড়া কেস এর কোন কাজ নেই। তবে বিভিন্ন ডিজাইন ও বিভিন্ন কাস্টমাইজেশন এর মাধ্যমে এটি কম্পিউটারের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। সাধারণত কালো বা সাদা রঙের বর্গাকার বক্স হিসেবে পাওয়া যায় যা ধাতু, প্লাস্টিক বা কাঁচের হতে পারে।
বাজেট অনুযায়ী ১৫০০৳ থেকে শুরু করে ১৫০০০৳ দামেরও কেস পাওয়া যায়।

মাদারবোর্ড – Motherboard

এরপর চলুন, কম্পিউটার এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ মাদারবোর্ড সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
মাদারবোর্ড হলো একটি প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড যার সাথে কম্পিউটারের অন্য সকল হার্ডওয়ার যুক্ত থাকে। এটি কেন্দ্রীয় হাব এর মত কাজ করে কম্পিউটারের বিভিন্ন পার্ট এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। মাদারবোর্ডে বিভিন্ন ধরনের ক্যাবল ও কম্পনেন্ট সংযুক্ত করার পোর্ট থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যও কিছু পোর্ট হল CPU Socket, পাওয়ার সাপ্লাই, USB, VGA, HDMI, RAM, Hard Drive, SSD, Graphics Card ইত্যাদি।

কিছু জনপ্রিয় মাদারবোর্ড কম্পানি হল- AMD, Gigabyte, ASUS, MSI, ASrock ইত্যাদি। মাদারবোর্ডের দাম মডেল ও ব্রান্ড এর ওপর নির্ভর করে ৫০০০৳ থেকে ৫০০০০৳ পর্যন্ত হতে পারে।

সিপিউ – CPU [Processor]

Hardware Amd Ryzen Cpu Chip Processor Pc
সিপিউ এর পূর্ণরুপ হল Central Processing Unit. কম্পিউটার কেনার আগে সবার আগে যেটা বিবেচনা করতে হবে, তা হল সিপিউ। কারন সিপিউ হল কম্পিউটারের প্রান। সিপিউ ছাড়া পিসি নিজে নিজে কিছু করতে পারেনা। সকল ডাটা এখানে ক্যাল্কুলেট হয়ে আউটপুট প্রদান করে। এছাড়া সব সিপিউ সব মাদারবোর্ড সকেটে সেট হয়না। সিপিউ এর ওপর কম্পিউটারের মান ও ক্ষমতা নির্ভর করে। সিপিউ যত উন্নত হবে, কম্পিউটার তত দ্রুত কাজ করবে। তাই কম্পিউটার বানানোর সময় সবার আগে সিপিউ বেছে নিতে হবে, এরপর সিপিউ এর সাথে তাল মিলিয়ে মাদারবোর্ড ও অন্যান্য কম্পোনেন্ট কেনা যাবে।

AMD আর Intel হল সবচেয়ে বড় দুটি প্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। মডেল ও ব্র্যান্ডের ওপর নির্ভর করে ৫ থেকে ৮৮ হাজার টাকা দাম এর সিপিউ পাওয়া যায়।

কম্পিউটার গ্রাফিক্সকার্ড – Computer Graphics Card [GPU]

অনেক সময় প্রসেসর এর ভেতরেই GPU থাকে যাকে Integrated GPU বলে। সংযত কারনেই এধরনের জিপিউ খুব বেশি পাওয়ার ফুল হয়না। তাই গেমিং বা গ্রাফিক্স এর যেকোন কাজ সাবলীল ভাবে করতে গ্রাফিক্স কার্ড প্রয়োজন হয়।

বিভিন্ন ব্রান্ড ও মডেলের ১০০০০ থেকে ১৫০০০০৳ দামের গ্রাফিক্স কার্ড পাওয়া যায়।

কুলিং সিস্টেম

একটা কম্পিউটারে প্রচুর পরিমানে তাপ উৎপন্ন হয় যা নিয়ন্ত্রন করা নাহলে কম্পউটারের ক্ষতি করে। তাই কম্পিউটারকে ওভার-হিটিং থেকে বাচাতে কুলিং সিস্টেম ব্যাবহার করা হয়। অনেক সময় CPU এর জন্যে আলাদা কুলিং সিস্টেম থাকে। বাজেট অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের কুলিং সিস্টেম পাওয়া যায়।

পাওয়ার ছাড়া কম্পিউটার চালানো কল্পনা করা যায়না তাই PSU অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কম্পনেন্ট। বিভিন্ন দাম ও সুবিধার পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট পাওয়া যায়।

RAM – র‍্যাম ও মেমোরি – Storage Device (SSD, NVME SSD, HDD)

র‍্যাম হল Random Access Memory. র‍্যাম এ সংরক্ষিত তথ্য সিপিইউ সহজেই পরতে পারে। একে Volatile বা পরিবর্তনশীল মেমোরি ও বলা হয়। এখানে সঞ্চিত ডেটা পাওয়ারের উপর নির্ভর করে এবং কম্পিউটার/ডিভাইস বন্ধ বা পুনরায় চালু করা হলে র‍্যামে সংরক্ষিত ডেটাও মুছে যায়। কম্পিউটার দ্রুত চালানোর জন্যে র‍্যাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ল্যাপটপ কেনার সময় বা পিসি তৈরি করার সময় র‍্যাম বিবেচনা করে কেনা বা বানানো উচিত।

র‍্যাম সাধারণত ইউনিট প্রতি 64MB থেকে 4GB পর্যন্ত হতে পারে। তবে, আজকাল উন্নত মানের 8-32GB র‍্যামস্টিক পাওয়া যায় যা গ্যামিং বা গ্রাফিক্স এর কাজের জন্য অপরিহার্য। সার্ভার গ্রেড র‍্যাম আরও বেশি মেমোরির হতে পারে।

বাজারে দুই ধরনের র‍্যাম পাওয়া যায়। এগুলি হল –

১। স্ট্যাটিক র‍্যাম – সবসময় পাওয়ার প্রয়োজন হয়, দ্রুত, বেশি দামী
২। ডায়নামিক র‍্যাম – বারবার রিফ্রেশ হয়, স্ট্যাটিক র‍্যামের তুলনায় ধীর এবং সস্তা

বিভিন্ন সাইজের হার্ড ড্রাইভ ও সলিড স্টেট ড্রাইভ পাওয়া যায়, যা ডাটা সংরক্ষনে ব্যাবহার হয়।

ডিস্প্লে বা মনিটর – Display device, monitor

ডিসপ্লে বা মনিটর হল কম্পিউটারের অউতপুট ডিভাইসের মধ্যে অন্যতম। বাজারে বিভিন্ন ধরনের মনিটর পাওয়া যায়। মনিটর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিঙ্কএ যান।

কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম – Computer Operating System [OS]

অপারেটিং সিস্টেম হল কম্পিউটার পরিচালনাকারী সফটওয়্যার। বর্তমানে তিনটি জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম আছে- মাইক্রোসফট এর Windows, Apple এর MacOS এবং ওপেনসোর্স Linux. আপনি আপনার পছন্দ ও প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোন একটি বেছে নিতে পারেন।

ইনপুট ডিভাইসেস – Input Devices, Mouse, Keyboard

বিভিন্ন কম্পানির বিভিন্ন ফিচার সমৃদ্ধ Keyboard ও Mouse পাওয়া যায়।

এই পার্টস গুলোর পাশাপাশি আরও কিছু accessories সমৃদ্ধ তিন ধরনের বাজেট এর কম্পিউটার বানাতে পারবেন,

১। বাজেট কম্পিউতারঃ ৩০০০০৳-৪৫০০০৳, গ্রাফিক্স এর কাজ বা গেমিং এর জন্য উপযোগী নয়।

২। মিড-রেঞ্জ কম্পিউটারঃ ৫০০০০৳- ৮০০০০৳, পড়ালেখা ও অন্যান্য স্বাভাবিক কাজের জন্যে উপযুক্ত, লো ও মাঝারি গ্রাফিক্স এর কাজ ও গেম ভালভাবে খেলা যাবে। ওপরের রেঞ্জে হাই গ্রাফিক্স এর কাজ ও গেম খেলা যাবে, যা গ্রাফিক্স কার্ড এর ওপর নির্ভর করবে।

আপনার মন্তব্য জানান

নবীনতর পূর্বতন