বদলে গেছি। সাইদুর রহমান মানিক।

আমি বদলে গেছি। সাইদুর রহমান মানিক 

আমি বদলে গেছি। প্রচন্ড বদলে গেছি। নিজেকে নিজেই চিনতে পারিনা আজকাল। জীবনটাকে কতইনা সংকীর্ণ ভাবতাম। ব্যস্ত নগরীর মানুষগুলোর প্রতিষ্টিত হওয়ার দৌড়ঝাঁপ্টা দেখে আমি ছিলাম নিশ্চিন্তে নিশ্চুপ। সবাই যখন এক টুকরো ক্ষুদ্র পৃথিবীতে নিজেকে ডেভেলপ করার চিন্তায়-কর্মে ব্যস্ত; আমি তখন জীবন-ভাবনার রোগে আক্রান্ত। আমি কি? আমার অস্তিত্ব কতটুকু? কি আমার ভবিষ্যৎ?

এই মহাবিশ্বের তুলনায় আমি নিজেকে অতি ক্ষুদ্র কোন এ্যামিবা/এককোষি ব্যাকটেরিয়া তুল্যও ভাবতে পারিনা। কিসের এতো দৌড়ঝাঁপ? কিসের এতো দাম্ভিকতা?   

শুধু ভাবতাম এই মহাবিশ্বের মহাকালের কাছে আমার অস্তিত্ব কতটুকু? 

একসময় এই ভাবনাই ছিল প্রচন্ড হতাশার। চারিপাশের আবেগি মানুষগুলোর ভীড়ে আমি অতি নিরবে ছিলাম হীনমন্য। আশে-পাশের প্রাণগুলোর ঝরে যাওয়া দেখে শুধু ভাবতাম আমিও একদিন এভাবে ঝরে যাবো। জীবন নিয়ে তখন কাতরতাবোধ ছিলো, হতাশা ছিলো। কারন, জীবনের প্রতি টান ছিলো। যারাই সংসারের জীবন সম্পর্কিত পাতানো গল্প-স্বপ্ন ছেড়ে নিরপেক্ষ ভাবনায় রত থাকে। এবং বুঝতে পারে এসব শুধুই গাল-গল্প আর ভুল স্বপ্ন। তখন প্রাথমিকভাবে হলেও সবাই জীবন নিয়ে হতাশায় ভোগে।  

আমি যখন হতাশায় নিমজ্জিত। হীনমন্যতায় ভুক্তভোগী। তখন সন্ধান পেলাম এক দেবদূতের। ড. এমদাদুল হক স্যার। উনার কাছ থেকে শিক্ষা নিলাম এই মহাবিশ্বের মহাকালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার। সংকীর্ণ ভাবনা ছেড়ে নিজেকে প্রশস্ত ভাবতে শুরু করলাম। ভাবতে শিখলাম 'আমাকে ছাড়া মহাবিশ্ব নয়, আমিও মহাবিশ্ব ছাড়া নই'। অর্থাৎ আমিই মহাবিশ্ব, মহাবিশ্বই আমি। আমি এখন সর্বত্র সবার মধ্যে আমাকেই দেখতে পাই। এখন আমি আর ক্ষুদ্র নই। ক্ষুদ্র আমি বিশালতায় ডুব দিলাম। আমি ছিলাম, আছি, থাকবো অনন্তকালধরে। 

হতাশা তখন আমাকে আর গ্রাস করেনা। আমি হতাশামুক্ত।

এক টুকরো আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া মানুষগুলোকে দেখে ভাবতাম 'আমার সাথে ডিপ্রেশনের কোন সম্পর্ক নেই'। কেননা, বিশেষ কোন কিছু চাওয়া-পাওয়ার টান নেই। মানুষ কোনকিছু না পেলে সেই শুন্যতাবোধে হতাশায় ভোগে। অথবা কোন কিছু পাওয়ার কাতরতায় ভোগে। আমিতো চাওয়া-পাওয়ার অনুভবমুক্ত। 

ছিলাম ছাত্রকালে। ছিলাম উন্মুক্ত, পরিবারনির্ভর। এখন ছাত্রজীবন পার করে কর্মকালে প্রবেশ করবো। আবারো আমার আকাশজুড়ে আঁধার নেমে এলো। আবারো হতাশা ভর করে নিলো। 

যার জীবনে ডিপ্রেশন বলতে কিছু ছিলোনা। সেও ভুগতে লাগলো চরম ডিপ্রেশনে। যার জীবনে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই, তার আজ চাওয়ার কোন শেষ নেই। সেও আজ দৌঁড়াতে লাগলো কোন কিছু পাওয়ার আশায়। পৃথিবীতে ঠিকে থাকার লড়াই এখন আমাকেও করতেই হয়। জীবনকে ডেভেলপ করার চিন্তায়-প্রতিযোগিতায় ভোগা লোকদের সাথে এখন আমিও একজন অংশীদার। যদিও সবই অভিনয়। কারন, সেই কবেই আবেগের গলা টিপে হত্যা করেছি। এখন আমাকে অভিনয় করেই আবেগ দেখাতে হয়। 

আমার জীবনটাই এখন অভিনয়ের। আমাকে অভিনয় করেই চলতে হচ্ছে। ব্যস্ত নগরীর ব্যস্ত লোকদের সাথে আমিও অভিনয়ে তাল মিলিয়ে হয়ে গেলাম ব্যস্ত নাগরিক। যদিও এভাবে অভিনয়ের মাঝে প্রত্যেক অণু সময়ই শ্বাসরুদ্ধকর। তবুও যতদিন আছি এই ভবে এভাবে অভিনয় করে আঁধার ভরা আকাশ ভালোবেসেই কাটিয়ে দেবো জীবনকাল।

1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন