![]() |
ফেসবুক পাড়ায় চোর লেখক |
ফেসবুক পাড়ায় লেখকের অভাব নাই। সবাই লেখক। এখানে পাঠকের শুন্যতা আছে। শুন্যতা নেই লেখকের। সারাদিন হিংসা,ঘৃণা আর লোভে মত্ত থাকা মানুষটিও এখানে আত্ম-উন্নয়নের গল্প লেখে। ধ্যান-ধারণায় সমাজচ্যুত ব্যাক্তিও সমাজদর্পণ নিয়ে দার্শনিক উক্তি প্রসব করে। 'পুঁজিবাদের' এর 'প' না বুঝা ব্যাক্তিটিও পুঁজিবাদ বিরুধী দীর্ঘ রচনা লেখে। 'রাজনিতী'র 'র' না বুঝা ব্যাক্তিও আন্তর্জাতিক রাজনিতীর গভীর বিশ্লেষন করে।
আবার,
কিছু ফেসবুক পাড়ার লেখকও দিনশেষে এক ধাপ এগিয়ে অফলাইন লেখকে কনভার্ট হয়। 'ব' এবং 'ভ' এর পার্থক্য না বুঝা মানুষটিও অবশেষে লিখে ফেলে 'বই'। শুরু হয় প্রচারণা। তৈরী হয় মুরীদ। অযোগ্য ব্যাক্তি কোন পদে আসীন হলে যেমন লম্ফঝম্প শুরু হয়। তেমনি এই 'ব' এবং 'ভ'-এর পার্থক্য না বুঝা বই লেখকেরা যখন 'লেখক' এর খেতাব পায় তখন শুরু হয় এদের মানসিক দম্ভ।
কূয়োর ব্যাঙ যেভাবে কূয়ার ভিতর থেকে কূয়াকেই জগৎ মনে করে। গুগুল করে জাতীয় পর্যায়ের কবি-লেখকদের লেখা চুরি করেও তারা ভাবে তাদের চৌর্যবৃত্তি ধরার এমন যোগ্যতা কার? এই শ্রেণীর লেখকদের দাম্ভিকতা দেখলে মনে হবে, তারা জগতের মহান লেখকের আসনজয়ের মনোভাব পোষন করে। 'কি যেন একটা হয়ে গেলাম' টাইপের মনোভাব এদের পিছু ছাড়েনা।
ফেবু পাড়ায় মাত্রাতিরিক্ত চৌর্যবৃত্তির উত্থান। বলা যায় এটা একটা চোরের রাজ্য। প্রকৃত লেখকেরা এখানে হারিয়ে যায়। কষ্ট লাগে তখন, চৌর্যবৃত্তির রাজ্যে যখন প্রকৃত লেখকেরা প্রশ্নবিদ্ধ হয় তার লেখা নিয়ে। যখন দেখি প্রকৃত লেখকেরা তার লেখা প্রমান করতে দৌড়ঝাপ করে।
যারা চৌর্যবৃত্তি করে তাদের প্রতি আমার কোন ঘৃণা নেই। রাগ বা ক্ষোভ নেই। ক্ষোভ উগরে দেওয়ার জন্যও এই লেখা না। বরং সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা থেকে লিখছি।
মানুষ যখন লেখার দিকে আবেগপ্রবন হয়, তখন প্রাথমিক সময়ে লেখকদের বিরাট একটা অংশই চৌর্যবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ে। নিজের ভিতরের অভিব্যক্তি যখন অপরের লেখায় খুজে পায় তখনই তা কপি পেস্ট করে নিজের ওয়ালে, নিজের নামে। অনেকে আবার এক ধাপ এগিয়ে অপরের লেখা কাটছাট করে নিজের স্মার্টনেস ধরে রাখে।
এক প্রকারের চোর আছে, দীর্ঘ লেখার কোন এক বাক্যেরই কোন রকম মর্ম না বুঝে নিজের ওয়ালে নিজের নামে কপি পেস্ট করে। না বুঝে কোন শব্দের অর্থ, আর না বুঝে বাক্যের মর্ম।
চোর লেখকদের নিয়ে আমি কলম ধরেছি। তার মানে আমি কি কোন লেখক? না আমি কোন লেখক নই। লিখতে পারলেই কেহ 'লেখক' হয়ে যায়না। বলতে পারলেই কেহ 'বক্তা' খেতাব পায়না। গাইলেই কেহ 'গায়ক' খেতাব পাওয়ার যোগ্য হয়ে ওঠে না।
তাপ সর্দি হলে নাপা আর হিস্টাসিনের অভিজ্ঞতার লোকেরা ফার্মাসিস্ট হয়ে যায়না।
এজন্য একটা লেভেলে পৌঁছা লাগে। আমি লেখক হওয়ার সেই লেভেলে নাই। লেখা আমার নেশাও না, পেশাও না। তবুও লিখি। লেখার প্রতি আমার কোন আবেগ উপচে পড়ে না। তবুও লিখি। মনের সাথে জোড় করে লিখি। লেখক হওয়ার আমার কোন স্বপ্ন নেই, চর্চা নেই। তবুও লিখি। জানি, আমার লেখায় কোন সৃজনশীলতা নেই। তবুও লিখি। আমি আমার ভিতরের অভিব্যক্তি লেখি। যেন ভবিষ্যতে দেখতে পারি আমার ভাবনা কেমন ছিলো। এজন্য লিখি। ভালো না লাগার মধ্য দিয়ে লিখি। যখন লিখি তখনও কোন আবেগ কাজ করে না। ভিতরের অভিব্যক্তি টেনে হিঁচড়ে বের করে লিখি।
আসুন, আজ থেকে শপথ নেই। আর নয় চুরি।
কারো লেখা পছন্দ হলে লেখকের নাম সহ প্রকাশ করুন। লেখকের নাম অজানা থাকলে কালেক্টেড, কপিরাইট জাতীয় শব্দ লিখুন। প্রকৃত লেখককে মুল্যায়ন করতে শিখুন। বই লেখার আগে ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা তৈরী করুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন